গুপ্ত সাম্রাজ্য( আনুমানিক 240 - 550 খ্রিষ্টাব্দ )

   গুপ্ত সাম্রাজ্য( আনুমানিক 240 - 550 খ্রিষ্টাব্দ )



1.  গুপ্ত বংশের প্রথম তিন জন রাজা হলেন  শ্রীগুপ্ত, ঘটোৎকচ গুপ্ত, প্রথম চন্দ্রগুপ্ত।

2. গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শ্রী গুপ্ত ।

3. গুপ্ত বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা সমুদ্রগুপ্ত।

4. গুপ্ত বংশের শেষ শক্তিশালী সম্রাট স্কন্দগুপ্ত।

5. বিষ্ণুগুপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের শেষ শাসক ছিলেন।  তাঁর শাসনকাল 540 থেকে 550 অবধি 10 বছর স্থায়ী হয়েছিল।


প্রথম চন্দ্রগুপ্ত(320AD-335 AD): -

6. 320 খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রগুপ্ত সিংহাসনে বসেন ।  এই  320  খ্রীষ্টাব্দ থেকে গুপ্তাব্দ প্রচলন হয় 

7. চন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন সমুদ্র গুপ্ত। চন্দ্রগুপ্তের উপাধি  -  রাজাধিরাজ।



 সমুদ্র গুপ্ত(335 AD - 380 AD) : - 

8. সমুদ্র গুপ্ত কে ভারতের নেপোলিয়ন আখ্যা দিয়েছিলেন ভিনসেন্ট স্মিথ (vincent Arthur Smith/V.A.Smith)

9. তাঁর সভাকবি হরিষেণ সেন সংস্কৃত ভাষায় এলাহাবাদ প্রশস্তি রচনা করেছিলেন।

10. এই প্রশস্তি থেকে জানা যায় তিনি উত্তর ভারতে তথা আর্যাবর্তের 9 জন এবং দাক্ষিণাত্যের 12 জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন।

12. সমুদ্র গুপ্ত নিজেকে 'একরাট'হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে ছিলেন।

13. উপাধি - পরাক্রমাঙ্ক,  বিক্রমাঙ্ক, সর্ব - রাজোচ্ছেতা,  অপ্রতিরথ প্রভৃতি।

14. তিনি গ্রহণ -পরিমোক্ষ -অনুগ্রহ নীতি প্রয়োগ করেছিলেন।

 15.তিনি ভালো বীণা বাদক ছিলেন। বীণা বাদনরত  মুদ্রায় ছবি থেকে সমুদ্রগুপ্ত সঙ্গীতপ্রেমী ছিল তার ধারণা পাওয়া যায়। সমুদ্র গুপ্ত বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন।


 16. তাঁর মন্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত বৌদ্ধ পন্ডিত বসুবন্ধু।


দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য (380AD - 414 AD) :-

17. সমুদ্রগুপ্তের পর রাজসিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।   তার উপাধি -  শকারি (শকদের শত্রু)

18.  বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করলেও তিনি পরধর্ম-মত  সহিষ্ণু ছিলেন।

19. তাঁর সেনাপতির নাম আম্রকর্দব।

20. তাঁর মন্ত্রীর নাম  বীর সেন।

21 দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের বা বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় নবরত্ন বা 9 জন জন পন্ডিত ছিলেন  -  কালিদাস, ধন্বন্তরি, ক্ষপনক,  শঙ্কু, বেতালভট্ট,  ঘটর্কপর, অমর সিংহ ও বররুচি।

 22. তিনি বিক্রম সম্বত নামে একটি অব্দের প্রচলন করেন।

24. চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে আনুমানিক 400 খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন এবং বহু তীর্থক্ষেত্র পরিভ্রমণ করে 411 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারত ত্যাগ করেন।

 25.  ফা-হিয়েনের রচিত 'ফো - কুয়ো - কিং'  নামক গ্রন্থ থেকে তৎকালীন ভারত সম্পর্কে নানান মূল্যবান তথ্য জানতে পারি।


প্রথম কুমার গুপ্ত(415AD - 455AD) :-

26. দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের পর সিংহাসনে বসেন প্রথম কুমার গুপ্ত।  উপাধি - মহিন্দ্রাদিত্য।

27. তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছিলেন।


স্কন্দগুপ্ত(455 - 467AD) : -

28. হুন আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন বলে তাকে ভারতের রক্ষাকর্তা বলা হয়।

29. 'আর্য মঞ্জুশ্রীকল্প' গ্রন্থে তাকে ন্যায় সম্পন্ন নিরপেক্ষ বিচারক আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

######@@@@@@@@@@@@@#######


30. এই সময়ে পশ্চিম এশিয়া থেকে আগত হুনেরা ভারতে শ্বেত হুন নামে পরিচিত ছিল।

31. স্কন্দ গুপ্তের মৃত্যুর পর  তোরমানের  নেতৃত্বে ভারতের উপর হুন আক্রমণ হয়েছিল।

32. তোরমানের পুত্র  মিহিরকুল কে  ভারতের এ্যাটিলা বলা হয়, যার রাজধানী ছিল শিয়ালকোট।

33. সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি, ধর্ম,বিজ্ঞান চর্চা প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতির জন্য গুপ্ত যুগকে সুবর্ণ যুগ বলা হয়।

34. গুপ্ত যুগের প্রধান ভাষা -  সংস্কৃত।

35. গুপ্তযুগের ব্রাহ্মণদের স্থান ছিল শীর্ষে, এছাড়া তারা অন্য বর্ণের পেশা গ্রহণ করতে পারতো।

36. গুপ্ত যুগ ছিল হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থানের যুগ।

37. এই যুগ এই প্রথম ইঁট পাথর দিয়ে মন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছিল।

38. মণি নাগের মন্দির, কেটেশ্বর মন্দির,  সাঁচীর মন্দির,  দেওঘরের দশাবতার মন্দির প্রভৃতি মন্দির স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।

39. এযুগের অজন্তা ইলোরা উদয়গিরি প্রভৃতি গুহা মন্দির গুলি এবং গুহাচিত্র গুলি স্থাপত্য - ভাস্কর্যের ইতিহাসে অনন্য নজির গড়েছিল।

40. বিষ্ণুর বাহন গরুর ছিল গুপ্তদের রাজ চিহ্ন। 

41. গুপ্ত যুগের মুদ্রার প্রণেতা বিশাখ দত্ত, মৃচ্ছাকটিক প্রণেতা শুদ্রক,পঞ্চতন্ত্র প্রনেতা বিষ্ণু শর্মা সাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।

42. মহাকবি কালিদাস এই যুগ এই ছিলেন তার লেখা বই এর নাম  অভিজ্ঞান শকুন্তলম মালাবিকাগ্নিমিত্রম মেঘদূতম্ কুমারসম্ভব ঋতুসংহার প্রভৃতি।


43. সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থের লেখক আর্য ভট্ট। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, শূন্যের ব্যবহার, বছরে 365 দিন হয় -এইসকল বিষয় জগতকে প্রথম তিনিই জানান।

42. বৃহৎসংহিতা ও পঞ্চসিদ্ধান্তিকা গ্রন্থের রচিয়তা হলেন বরাহমিহির। 

43. চন্দ্রগুপ্তের সময় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ধন্বন্তরি ছিলেন।

########@@@@@@@@@@@@#######


গুপ্ত সাম্রাজ্য


👉  গুপ্ত যুগের কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ও রচয়িতার নাম --

রচয়িতার নাম গ্রন্থের নাম
কালিদাস মহাকাব্য - মেঘদূতম,কুমারসম্ভবম, নাটক - অভিজ্ঞান শকুন্তলম,মালবিকাগ্নিমিত্রম,
বিশাখদত্ত দেবী চন্দ্রগুপ্তম (নাটক)
বরাহমিহির পঞ্চসিদ্ধান্তিকা, বৃহৎ সংহিতা
ব্রহ্মগুপ্ত ব্রহ্ম সিদ্ধান্ত, খন্ডখাদ্য
শূদ্রক মৃচ্ছকটিক
ভারবি কিরীতার্জুনীয়ম
ভট্টি ভর্তি কাব্য
আর্য ভট্ট সূর্যসিদ্ধান্ত
বিষ্ণু শর্মা পঞ্চতন্ত্র
দন্ডী দশকুমারচরিত
অমর সিংহ শব্দকোষ

No comments:

Post a Comment